সৌদি আরব পর্যটন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম তাদের মেট্রোরেলের যোগাযোগব্যবস্থা। শহরে মেট্রো সাধারণত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছানোর জন্য ব্যবহার করা হয়, কিন্তু সৌদির নতুন রিয়াদ মেট্রো এ ধারণাকেই বদলে দিয়েছে।

শুধুই গন্তব্যে পৌঁছানোর মাধ্যম নয়, এই মেট্রোযাত্রা আপনাকে ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা দেবে। গত বছরের ডিসেম্বরে চালু হয় এই স্বয়ংক্রিয় দ্রুতগামী রেলব্যবস্থা।

মেট্রোর দৈর্ঘ্য ১৭৬ কিলোমিটার, যেটি ছয় লাইনে বিস্তৃত। এটি বিশ্বের দীর্ঘতম ড্রাইভারবিহীন মেট্রোব্যবস্থা। রিয়াদের প্রধান এলাকা ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সঙ্গে এটি যুক্ত। এর মধ্যে রয়েছে কিং খালিদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও কিং আবদুল্লাহ ফিন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট। এই মেট্রো প্রকল্পের ব্যয় ২২ বিলিয়ন ডলার।

বিশেষ স্টেশন: ৮৫টি স্টেশনের মধ্যে চারটি বিশেষভাবে পর্যটকদের জন্য সাজানো হয়েছে। সেগুলো কেএএফডি, এসটিসি, ওয়েস্টার্ন স্টেশন ও কাসর আল হোকম।

কাসর আল হোকম স্টেশন রিয়াদের ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রে অবস্থিত। নরওয়েজিয়ান আর্কিটেকচার ফার্ম ও ডিজাইন ফার্ম যৌথভাবে এটি তৈরি করেছে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে উদ্বোধন হওয়া এই স্টেশন সরকারি ভবন ও দর্শনীয় স্থানগুলোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। স্টেশনটি নিজেই একটি শিল্পকর্ম। ২২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে স্টেশনটি ৪০ মিটার গভীরে সাততলায় বিস্তৃত। এখানে ১৭টি লিফট ও ৪৬টি এস্কেলেটর রয়েছে। দোকানপাট, শিল্পকর্ম ও ইনডোর বাগানও রয়েছে। সেখানে যাত্রীরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে পারেন।

রিয়াদের বাসিন্দা এক বাসিন্দা বলেন, এই স্টেশন এখন শহরের জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানগুলোর একটি।। শুধু স্টেশনটির সৌন্দর্য নয়, এর পাঁচ মিনিটের পথের মধ্যে শহরের ঐতিহ্যবাহী বাজারও পাওয়া যায়। কেএএফডি স্টেশন কাসর আল হোকম থেকে ৩০ মিনিট দূরে। এটি অত্যন্ত ব্যস্ত ও তিনটি লাইনের সঙ্গে যুক্ত। স্টেশনে স্থায়ী শিল্পকর্মের মধ্যে মার্কিন শিল্পী আলেকজান্ডার ক্যালডারের একটি ভাস্কর্যও রয়েছে।

এসটিসি স্টেশন দুটি লাইনের সংযোগস্থল। জার্মান আর্কিটেকচার ফার্ম দ্বারা এটি সৌদি আরবের টুয়াইক পর্বতের চুনাপাথরের আকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে তৈরি হয়েছে।

আধুনিক প্রযুক্তি ও সুবিধা: মেট্রোর ট্রেনগুলো শক্তি সাশ্রয়ী এবং রিজেনারেটিভ ব্রেকিং সিস্টেমে সজ্জিত। স্টেশনগুলোতে সৌর প্যানেল রয়েছে। ভ্রমণকারীরা ডার কার্ড কিনে বা ডার অ্যাপ ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারেন। মেট্রো সকাল ৫টা ৩০ থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চালু থাকে। ভাড়া খুবই সাশ্রয়ী। দুই ঘণ্টার জন্য মাত্র ৪ সৌদি রিয়াল বা এক ডলার। যাত্রাপথও আলাদা। পুরুষ, পরিবার ও প্রথম শ্রেণির জন্য আলাদা কারেজ। মেট্রোতে খাবার নিষিদ্ধ। সিটগুলো রিয়াদের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের অনুপ্রেরণায় ডিজাইন করা।

যাত্রার অভিজ্ঞতা: ট্রেনগুলো দ্রুত ও সময়মতো চলে। ভিড় ছাড়া যাতায়াত করলে বেশ শান্ত পরিবেশ। তবে সিটের সংখ্যা লন্ডনের আন্ডারগ্রাউন্ডের তুলনায় কম, তাই ভিড় বাড়লে অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। কিছু স্টেশন, যেমন কেএএফডি ও কাসর আল হোকম খুব বড়। প্রথমবার যাত্রীরা এগুলো ঘুরে একটু বিভ্রান্ত হতে পারেন। তবে স্টাফরা সব সময় সাহায্যের জন্য প্রস্তুত থাকেন।

শহরের নতুন দিগন্ত: রিয়াদ সিটির কমিশনের সিইও ইব্রাহিম বিন মুহাম্মেদ আল সুলতান বলেন, এই প্রজেক্ট শহরের চিত্র বদলে দিয়েছে এবং বাসিন্দারা এখন সহজে যাতায়াত করতে পারেন। এটি রিয়াদের অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত ও নগর উন্নয়নের সঙ্গেও জড়িত। উদ্বোধনের ছয় মাসের মধ্যে মেট্রো ১৮ মিলিয়নের বেশি যাত্রী পরিবহন করেছে। মেট্রো সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও ইতিমধ্যে হাতে নেওয়া হয়েছে। রিয়াদ মেট্রো শুধু একটি যাতায়াতব্যবস্থা নয়, এটি শহরের আধুনিকতার প্রতীক।